লেখকের কথা
গল্পকে আমি বলি হৃদয় বােনার সুতা। সুঁইয়ের ভেতর দিয়ে চিকন সুতা। যেমন বিন্দু-বিন্দু হয়ে বুনন করে অনিন্দ্য নকশী কাঁথা, তেমনি গল্পের উদ্দিষ্ট চরিত্র নির্মাণ করে মানবহৃদে চেতনার সুরম্য প্রাসাদ—অতি সন্দর্পণে। বাবুই পাখি যেমন সবুজ পাতার বনে নির্মাণ করে তার নান্দনিক বাসগৃহ। প্রতিটি গল্প যেন বাবুই পাখির কুড়িয়ে আনা খড় টুকরো।
গল্পের চরিত্র যদি হয় কলুষিত, তাহলে চেতনা হবে কুৎসিত ও কালাে, ধ্বংস ও বিরানের। মিথ্যের দুর্গন্ধ এবং পশুত্বের কুর্দন, অশ্লীলতা ও স্বেচ্ছাচারের আস্ফালন থাকবে। ফলে চেতনার সে ইদুর কুটেকুটে খাবে সমূহ কল্যাণের বীজ। সূক্ষ্ম দাঁতে ছিড়ে ফেলবে শান্তি ও সুখের চিরন্তন সংবিধান।
গল্পের চরিত্র যদি হয় শাশ্বত সুন্দর, তাহলে চেতনা হবে স্বর্ণালী উন্নত, ভুবনজয়ী, সাম্য ও মানবতাবাদী। চরিত্রে থাকবে বেলফুলের সুবাস। হাসনাহেনার নিশিগন্ধ। থাকবে নন্দনের দ্যুতি। সত্য ও প্রেমের মঞ্জুরি। তখন চেতনার সে নার্গিস তার সুরবেহাগে মাতিয়ে তুলবে সমাজের রন্ধ্র রন্ধ্র। চাঁদের অপরূপ জোছনার মতাে মুঠি মুঠি ঢেলে দিবে বিশ্বাসের সুগন্ধি। ব্যক্তির হৃদয় ও মননকে সুবাসিত করে তুলবে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে ভাসিয়ে নিবে শুদ্ধতার ঝরনায়।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমার রাসূল। আমাদের রাসূল। সর্বকালের সর্বযুগের সর্বসময়ের তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। ইতিহাসের সর্বেসর্বা সে মহান ব্যক্তির আদর্শ চরিত্রে যরি নাইতে পেরেছেন, তার শিক্ষা ও দর্শনের স্বচ্ছ নদীতে যারা অবগাহন করেছেন তারা—সাহাবায়ে কেরাম। এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। পবিত্র কুরআন তাদেরকে পরিধান করিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের শােভিত মাল্য। আর যুগে-যুগে, কালে-কালে, সুদীর্ঘ সহস্রাব্দজুড়ে যারা পবিত্র ও ফুলেল সেই নববী ও সাহাবা আদর্শে আকাশসম উন্নীত হয়েছেন তারা সালাফু হাফিয়িল উম্মাহ-আমাদের আসলাফ ও আকাবীর।
ইতিহাসের সেই রাসূলমানব ও সাহাবায়ে কেরাম এবং সুদীর্ঘ কালব্যাপী ইসলামের মান্য-বরিত নক্ষত্রসম আসলাফ ও আকাবীরের জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে গেছে বহু ঘটনা। বহু সাক্ষী। কালজয়ী বহু ইতিবৃত্ত। সেসব ঘটনা ও গল্পের চরিত্র অনন্য শিক্ষায় ভরপুর। আকাশ উন্নীত ও পাহাড় অটল চেতনা ও আদর্শে উন্নীত। যা উত্তরপ্রজন্মের হৃদয়ে বুনে দিবে চেতনা ও আদর্শের শাশ্বত চারা। সুই হয়ে তাদের পরানের গহীনে এঁকে দিবে বিশ্বাসের অনিন্দ্য নকশী কাথা। রক্তরাঙা শিমুল হয়ে থােকায়-থােকায় ফুটবে অন্তর-বাগানে। আত্মার জমিনে চাষাবাদ করবে রাশি-রাশি সােনালি শষ্য।
‘ইতিহাসের সােনালি আন্তিন’ একটি ঐতিহাসিক গল্পগ্রন্থ। প্রতিটি গল্পের আছে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। তবে সে চরিত্রের নির্মাতা আমি নই। কল্পনার রঙ মিশিয়ে অলীক কোন চরিত্রের অবতারণা করিনি। ইতিহাসের ভাঁজে ভাঁজে, মহাকালের পরতে পরতে তারা দাঁড়িয়ে আছে আপন ঔজ্জ্বল্য আর দ্বিগুণ মহিমায়। আমি শুধু উপযুক্ত শব্দ জুড়ে দেবার শ্রমটুকুই করেছি—তার মতাে, যে বাগান থেকে ফুল কুড়িয়ে এনে তৈরি করে স্নিগ্ধ মাল্য। আমি চেয়েছি বাগানের পুষ্পিত বকুলগুলাে গেঁথে-গেঁথে একটি ফুলমাল্য তৈরি করে—পাঠক আপনার গলায় পরিয়ে দিতে কেবল। বড় আনন্দের বিষয় হলাে, বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের প্রতিটি গল্পের মূল চরিত্র একজন সাহাবী। প্রসঙ্গত আলােচিত হয়েছে আরাে অনেক সাহাবীর নাম। এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদেরকে হাজির করেছি গল্পের মােড়কে।
বইটি প্রকাশের আনন্দঘন মুহূর্তে হৃদয়াবনত শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহীয়ান প্রভুর। দরুদ-সালাম প্রেরণ করছি দূর মদীনার সবুজ গম্বুজের ছায়ায় এক আকাশ গর্ব আমার রাসূল, আমার হৃদয়-মনের মুকুট হ্যরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরে। যার একজন নগণ্য অনুসারী হতে পেরে চেতনাজুড়ে সর্বদা অপার্থিব পুলক অনুভব করি। হাউজে কাউসারের পাদদেশে দাড়িয়ে তিনি সিক্ত করবেন আমার তৃষিত আত্মা-প্রার্থনা করি।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি যাদের শ্রম ও ভালােবাসার আঁচড় লেগে আছে গ্রন্থটিতে। প্রিয় বন্ধু হাবীবুল্লাহ সিরাজ—লেখক পরিচিতি লিখে ফের কৃতজ্ঞতায় ঋণী করেছেন। এটি বরাবরের মতাে আমার প্রতি তার ভালােবাসা ও লেহের অপার নিদর্শন। বইটি প্রকাশ করেছে সময়ের আলােচিত, রুচি ও নির্মাণে দীপিত রাহনুমা প্রকাশনী। কর্ণধার শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার মানুষ, ইসলামী প্রকাশনা শিল্পের অন্যতম আধুনিক রূপকার মুহতারাম মাহমুদুল ইসলাম—গ্রন্থটি সৌন্দর্যের মােড়কে আবৃত করে পাঠকের হাতে তুলে দিতে অসামান্য পরিশ্রম করেছেন। লেখক, প্রকাশক, প্রচ্ছদ শিল্পী, ফরিডারসহ নাম জানা-অজানা আরাে যাদের পরিশ্রম মেখে আছে দয়াবান আল্লাহ সকলকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। দুনিয়া ও আখেরাতে অধিকতর সম্মানিত করুন। আমীন!
Reviews
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.